তাকওয়া (ধর্মানুরাগ) কোন লোকদের জন্য?
ইলম-উল-ইয়াকীন (জ্ঞানভিত্তিক বিশ্বাস)
এ ধরনের লোক সাধারণত দুনিয়াদার হয়। তারা মাকাম-এ-শুনীদ (শুধুমাত্র শোনা কথার ওপর বিশ্বাস) স্তরে থাকে। তাদের বিশ্বাস জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে, কিন্তু এই বিশ্বাস শোনা কথার ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় তারা সহজেই পথভ্রষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। তারা জীবিকা অর্জন করে প্রচেষ্টার মাধ্যমে, তবে এটি তাকওয়ার (পরহেজগারির) মাধ্যমে হয় না। তারা হালাল (অনুমোদিত) বা হারাম (নিষিদ্ধ) যেকোনো উপায়ে উপার্জন করতেও পিছপা হয় না।
আইন-উল-ইয়াকীন (চাক্ষুষ নিশ্চিত বিশ্বাস)
এই ধরনের লোকদের তারাক আল দুনিয়া বলা হয়, অর্থাৎ যারা দুনিয়ার মোহ ও বিলাসিতা থেকে দূরে থাকেন, কিন্তু দুনিয়ার মানুষের সাথেই বসবাস করেন। তবে, তাদের মন ও দৃষ্টি সবসময় আল্লাহর দিকে থাকে। তারা প্রায়ই আল্লাহর দয়া ও নূরের দৃশ্য (রাহমানী মানাজের) দেখতে পান। তাদের অবস্থান হলো প্রভুর দর্শনের পথে। তারা সবসময় হালাল উপায়ে জীবিকা অর্জন করেন, আর হারাম কোনো কিছু তাদের জন্য কষ্টদায়ক হয়ে ওঠে।
হকুল ইয়াকীন (সত্যের ওপর অবিচল বিশ্বাস)
এরা রাসিদ (যারা আল্লাহর দরবারে সুপারিশের যোগ্য) পর্যায়ের মানুষ। আল্লাহ তাদের বিশেষ মর্যাদা দান করেন এবং তারা আল্লাহর তাজাল্লির (দৈব নূরের) অন্তর্ভুক্ত হয়ে দুনিয়ার প্রতি উদাসীন হয়ে পড়েন। তারা দুনিয়ায় মানুষের মাঝে বসবাস করলেও, হালাল বা হারাম—কোনো ধরনের জীবিকা অর্জনের পথে হাঁটেন না। আল্লাহ তাদের জন্য অদৃশ্য ভাণ্ডার থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করেন, এমনকি তারা যদি নির্জন বন-জঙ্গলে বসবাসও করেন।
এটাই তাকওয়ার (পরহেজগারির) প্রকৃত স্তর। যদিও অনেক নবীন আধ্যাত্মিক সাধক নিজেদের তাকওয়াধারী বলে দাবি করেন, কিন্তু তারা তা ধরে রাখতে সক্ষম হন না।