Skip to content

লতিফায়ে কাল্ব

মাংসপিণ্ডকে উর্দুতে হৃদয় এবং আরবীতে ফুয়াদ বলা হয়, এবং হৃদয়ের সাথে থাকা আধ্যাত্মিক মাখলুককে কাল্ব বলা হয়। এর নবুয়ত ও জ্ঞান আদম (আঃ) পেয়েছেন। হাদীসে আছে যে, হৃদয় এবং কাল্বের মধ্যে পার্থক্য আছে। এই দুনিয়াকে নাসুত (পার্থিব জগত) বলা হয়। এর বাইরে আরো কয়েকটি জগত আছে— যেমন মালাকুত (ফেরেশতাদের জগত), আন্কাবুত (যে উর্ধ্ব জগতে আল্লাহর সিংহাসন), জাবরুত (রুহের জগত এবং জিব্রাঈল (আঃ)-এর অবস্থান), লাহুত, অহদাত এবং আহদিয়াত। মোকামে নাসুতে অগ্নি গোলক বিস্ফারিত হওয়ার পূর্বেও এই জগতগুলো ছিল, এবং এর মাখলুকাতও আগে থেকেই মজুদ ছিল। রূহের সাথে ফেরেশতা সৃষ্টি হয়। তবে, মালায়েকা এবং লতিফাসমূহ আগে থেকেই উক্ত জগতসমূহে মজুদ ছিল। পরে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে (আলমে নাসুত) কয়েকটি গ্রহের মধ্যেও দুনিয়ার আবাদ হয়। কিছু গ্রহ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং কিছু ধ্বংস হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। এ আধ্যাত্মিক মাখলুক, অর্থাৎ লতিফাসমূহ এবং মালায়েকা, রূহের ‘হও’ আদেশের ৭০ হাজার বছর আগে তৈরি করা হয়েছিল। এর মধ্যে লতিফায়ে কাল্বকে মোকামে মহব্বতে (প্রেমের স্থানে) রাখা হয়। এর মাধ্যমেই আল্লাহর সাথে মানুষের সম্পর্ক স্থাপিত হয়। য়াল্লাহ্ এবং বান্দার মধ্যে এই কাল্ব টেলিফোন অপারেটরের মত কাজ করে। এর মাধ্যমে মানুষের কাছে আধ্যাত্মিক নিদর্শন এবং এলহাম (আল্লাহর সাথে গোপন কথোপকথন) আসতে থাকে। এলহামের সাথে সবসময় স্পষ্ট নিদর্শন আসে। নিদর্শন ছাড়া এলহাম বিশুদ্ধ হয় না। তাছাড়া লতিফাসমূহের এবাদতও এর মাধ্যমে উচ্চতর আরশে (আল্লাহর সিংহাসনের জগৎ) পৌঁছায়। কিন্তু এই মাখলুক (কাল্ব) স্বয়ং মালাকুত অতিক্রম করতে পারে না। এর অবস্থান খোলদ (জান্নাতের সবচেয়ে নিচের স্তর) পর্যন্ত। এর এবাদত ও দেহের ভিতরে এবং তসবীহও মানবদেহের কাঠামোর মধ্যে। কাল্বের এবাদত না করা এমন বেহেশতিও আফসোস করবে। কারণ আল্লাহ বলেন- “এরা কি বুঝে রেখেছে যে, আমরা তাদেরকে নেককারদের সমান মর্যাদা দেবো?” কারণ আলোকিত কাল্বওয়ালাগণ বেহেশতেও আল্লাহ আল্লাহ করতে থাকবে। মৃত্যুর পর দৈহিক এবাদত শেষ হয়ে যায়। যার কাল্ব এবং লতিফা আল্লাহর নূরে শক্তিশালী নয়, সে কবরেও দুরবস্থায় থাকবে অথবা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে যাবে। তবে নূরময় ও শক্তিশালী লতিফাসমূহ মোকামে ইল্লীইনে (উচ্চস্থানে) চলে যাবে। হাশরের দিন দ্বিতীয় দেহ প্রদানের পর, পুনরায় এই লতিফাগুলো ইনসানী রূহের সাথে দিদারওয়ালা (যারা পৃথিবীতে রবের দর্শন করেছিলেন) অমর অলিগণের দেহে প্রবেশ করবে, যারা দুনিয়াতে আল্লাহ আল্লাহ শিখিয়েছিলেন, এবং তারা সেখানেও আল্লাহ আল্লাহ করতে থাকবে, তাদের মর্যাদা বাড়তে থাকবে। আর যারা এখানে হৃদয়ের অন্ধ ছিল, তারা সেখানেও অন্ধই থাকবে। কারণ এই দুনিয়াতেই কর্মক্ষেত্র ছিল এবং তারা একই অবস্থায় থাকবে। খৃষ্টান, ইহুদি ও হিন্দু ধর্মও এ আধ্যাত্মিক সৃষ্ট জীবগুলোর (লতিফাসমূহ) প্রতি বিশ্বাসী। হিন্দুরা এদের শক্তিগুলো (ইন্দ্রিয়) এবং মুসলমানরা এদের লাতায়েফ বলে। কাল্ব, হৃদয়ের বাম দিকে দুই ইঞ্চি দূরে অবস্থিত। এই মাখলুকের রং হলুদ। এর জাগরণের কারণে মানুষ নিজের চোখে হলুদ আলো অনুভব করে। কিছু আধ্যাত্মিক শিক্ষক (আমেল) এই লতিফাসমূহের রং ব্যবহার করে লোকদের চিকিৎসা করেন। অধিকাংশ লোক নিজের হৃদয়ের কথাকে সঠিক মনে করে। কিন্তু, যদি প্রকৃতই হৃদয় সত্য হতো, তবে সকল হৃদয়ওয়ালা এক হতো। সাধারণ লোকের কাল্ব সানোবার (অচেতন) হয়। এতে কোন শোধবোধ থাকে না। নফস এবং খান্নাসের প্রভাবে অথবা নিজের সরলতার কারণে এটি ভুল সিদ্ধান্তও নিতে পারে। কাল্বে সানোবারর উপর আস্থা স্থাপন করা বোকামি। এই হৃদয়ের মধ্যে যখন আল্লাহর যিকির শুরু হয়, তখন এর মাধ্যমে ভালো খারাপের পার্থক্য বোঝা যায়। একে কাল্বে সালীম (নিরাপদ হৃদয়) বলা হয়। এরপর যিকিরের প্রভাবে এর দিক (প্রবৃত্তি) প্রভুর দিকে প্রত্যাবর্তন করে। এটাকে বলা হয় কাল্বে মুনীব (প্রভুর দিকে প্রত্যাবর্তিত হৃদয়)। এই হৃদয় মন্দ থেকে বিরত রাখতে পারে, কিন্তু সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এরপর, যখন এই হৃদয়ের মধ্যে আল্লাহ তা’লার নূর প্রবাহিত হতে শুরু করে, তখন তাকে কাল্বে শহীদ বলা হয়। হাদীস- “ভগ্ন হৃদয় এবং ভাঙা কবরে আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন।” সে সময় হৃদয় যা বলে, তা চুপ করে মেনে নাও। কারণ নূরর প্রভাবে লতিফায়ে নফসও মুতমাইন্না (পবিত্র ও সন্তুষ্ট প্রবৃত্তি) শান্ত হয়ে যায় এবং আল্লাহ শাহরগের (কণ্ঠনালীর) নিকটবর্তী হয়ে যায়। এরপর আল্লাহ বলেন-“আমি তার জিহ্বা হয়ে যাই; যা দ্বারা সে কথা বলে, আমি তার হাত হয়ে যাই; যা দ্বারা সে ধরে।