Skip to content

তাঁর পবিত্র মহিমা গওহার শাহীর পবিত্র বাণীসমূহ

"যদি কেউ সারা জীবন ইবাদত করেও শেষ মুহূর্তে ইমাম মেহেদী (আঃ) ও হযরত ঈসার (আঃ) বিরোধিতা করে, তাহলে সে বালআম বাউরের মতো দোজখে যাবে এবং ইবলিসের মতোই আল্লাহর দরবার থেকে প্রত্যাখ্যাত হবে। কারণ, হযরত ঈসা (আঃ) ঠিক সেই শরীরেই ফিরে আসবেন যেভাবে তিনি আসমানে উঠেছিলেন, আর ইমাম মেহেদী (আঃ) আসবেন নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর পার্থিব রূহদের মাধ্যমে। অন্যদিকে, যদি কেউ সারা জীবন কুকুরের মতো জীবন যাপন করেও শেষ পর্যন্ত ইমাম মেহেদী (আঃ) ও হযরত ঈসা (আঃ)-এর সহযোগী হয় এবং তাদের ভালোবাসে, তাহলে সে হযরত কিতমীরের মতো জান্নাতে প্রবেশ করবে।"

"কিছু ধর্ম ও সম্প্রদায় বলে, ‘হযরত ঈসা (আঃ) মারা গেছেন, এবং তাঁর কবর আফগানিস্তানে অবস্থিত।’ এটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত প্রচারণা। আফগানিস্তানে যে কবর রয়েছে, তা হযরত ঈসা (আঃ)-এর নয়, বরং সেখানে আরেকজন বুযুর্গ ব্যক্তি শায়িত আছেন, যার নামও ঈসা ছিল। সেই আদিম যুগে এত দূরের জায়গায় গিয়ে দাফন করার উদ্দেশ্যই বা কী ছিল? তারা বলে, ‘কীভাবে হযরত ঈসা (আঃ) আসমানে উঠলেন?’ আমরা বলি, ‘তাহলে হযরত আদম (আঃ) কিভাবে আসমান থেকে পৃথিবীতে এলেন?’ মনে রাখো, হযরত ইদ্রিস (আঃ) এখনো সশরীরে জান্নাতে জীবিত আছেন। হযরত খিজির (আঃ) ও হযরত ইলিয়াস (আঃ) আজও দুনিয়ায় জীবিত রয়েছেন এবং এখনো মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করেননি। হায়াত আল আমির, আবদুল কাদির জিলানির পৌত্র, ৬০০ বছর ধরে বেঁচে আছেন। আবদুল কাদির জিলানি তাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, 'আমার সালাম ইমাম মেহদী পর্যন্ত পৌঁছানোর আগে মৃত্যুবরণ করো না।' হায়াত আল আমিরই শাহ লতিফকে 'বাড়ি ইমাম' উপাধি দিয়েছিলেন। তার বসার স্থান এখনো বারা কোহে, যা পাকিস্তানের মুর্রী এর কাছে অবস্থিত, সেখানে সংরক্ষিত আছে।"

দৈহিক পাপের শাস্তি হলো কারাদণ্ড, জরিমানা অথবা মৃত্যুদণ্ড। আধ্যাত্মিক পথে চলা ব্যক্তিদের জন্য শাস্তি হলো হচ্ছে তিরস্কার।তবে আধ্যাত্মিক পাপের শাস্তি অত্যন্ত কঠিন। যারা গীবত করে, তাদের নির্দিষ্ট পরিমাণ পূণ্য তাদের হিসাব থেকে কেটে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের (যার নামে গীবত করা হয়েছে) কাছে পৌঁছে যায়। লোভ, ঈর্ষা, কৃপণতা এবং মিথ্যা গর্ব তাদের কঠোর পরিশ্রমে অর্জিত পূণ্যগুলো মুছে ফেলে। এমন ব্যক্তিরা, যদি তারা আল্লাহর নূর কিছু পরিমাণ ধারণ করে, তবে তারা যখন নবী এবং আউলিয়া (সন্ত) সম্পর্কে কটূক্তি করে এবং তাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণ করে, তখন তাদের নূর শেষ হয়ে যায়, যেমন আবদুল কাদির জিলানির বিরুদ্ধে কটূক্তি করার কারণে শেখ সানান তার আধ্যাত্মিক দৃষ্টি এবং অলৌকিক ক্ষমতা হারিয়েছিলেন।


বায়োজিদ বোস্তামি জানতে পারেন যে একজন ব্যক্তি তার সম্পর্কে মন্দ কথা বলে বেড়ায়। বায়োজিদ তাকে এর জন্য জন্য টাকা দিতে শুরু করেন। ব্যক্তি টাকা গ্রহণ করলেও, সে তার সমালোচনা চালিয়ে যায়। একদিন, তার স্ত্রী তাকে বললেন, ‘তুমি হয় তো টাকা নেওয়া বন্ধ করো, নয়তো বায়োজিদ বোস্তামি সম্পর্কে মন্দ কথা বলা বন্ধ করো।’ এরপর সে বায়োজিদ বোস্তামির প্রশংসা করা শুরু করে। যখন বায়োজিদ জানলেন যে সে এখন তার প্রশংসা করছে, তখন তিনি তার আর্থিক সাহায্য বন্ধ করে দিলেন। তিনি বায়োজিদকে দেখতে গেলেন এবং বললেন, ‘আমি যখন আপনার নামে খারাপ কথা বলছিলাম, তখন আপনি আমাকে টাকা দিতেন, এখন যখন আমি আপনার প্রশংসা করি, আপনি টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিলেন কেন?’ বায়াজিদ বললেন, ‘তুমি তখন আমার সেবক ছিলে, তুমি আমাকে খারাপ বলে বেড়াচ্ছিলে এবং এতে আমার পাপগুলো পুড়ছিল। তুমি এখন সেটা বন্ধ করেছ, তাহলে কেন আমি এখন তোমাকে টাকা দেব?’এখানে যে দুর্বলতাগুলোর কথা বলা হয়েছে, সেগুলো হলো 'নাফসে আম্মারা' (অপরাধপ্রবণ রুহ), এবং শয়তান (ইবলিস) এর সাহায্যকারী। পরহেজগারি, দানশীলতা, ক্ষমা, ধৈর্য এবং কৃতজ্ঞতা, বিনয় এবং আল্লাহর প্রকাশ এসব সবই ‘কাল্ব-ই-শাহীদ’-এর বৈশিষ্ট্য। আর ‘ওয়ালি-মুর্শিদ’ (মুর্শিদ) তার অভিভাবক এবং সহায়ক (তিনি শিষ্যকে শয়তানের চালাকির বিরুদ্ধে সাহায্য করেন)।


যতক্ষণ না নাফসে আম্মারা থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর নূরী শব্দ হৃদয়ে থাকতে পারে না, এমনকি কেউ যদি আসমানি কিতাবের আয়াতও মুখস্থ করে। এমন ব্যক্তির উদাহরণ হলো এক পাখি, যে বারবার একই কথা বলে, কিন্তু তার ভিতর কোনো গভীরতা নেই। তবে যখন মুতমাইন হয়, তখন কোনো অপবিত্রতা তোমার মধ্যে থাকতে পারে না।তখন তোমার মোরগে বিসমিল অর্থাৎ কাম প্রবৃত্তি পবিত্র হয়ে যাবে। । নাফসের পরিশুদ্ধির জন্য, একজন আল্লাহ দ্বারা নিযুক্ত ‘নাফস-শিকান’ (আত্ম-ধ্বংসকারী) শিষ্যকে সহায়তা করতে আসে, এবং এমন সাধকরা সর্বদা আল্লাহর নির্দেশে নিযুক্ত হন।

দেহের বহিরভাগ পরিষ্কার হয় পানি দ্বারা আর, দেহের ভিতরাংশ পবিত্র হয় আল্লাহ এর নূর দ্বারা। পরিষ্কার হওয়া ছাড়া উহা দুর্গন্ধযুক্ত ও অপবিত্র। পরিষ্কার দেহই এবাদতের যোগ্য। বস্ততঃ পরিষ্কার হৃদয় প্রভুর নূর লাভের যোগ্য হয়। তাইতো ঐশী গ্রন্থ সমূহ পবিত্রদেরই সত্য পথ প্রদর্শন(হেদায়েত) করে। তা না হলে কেতাবধারীগণই কেতাবধারীদের শত্র“ হয়ে যেতো।

মুজাদ্দিদ আলফেসানী তার মাকতুবাতে লিখেছেন, "যাদের নফস আম্মারা আছে, তারা কোরআন পাঠ করার যোগ্য নয়। আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জনকারী প্রথমে আল্লাহর যিকির করবে, অর্থাৎ তার অন্তর পবিত্র করবে, আর যখন সে পূর্ণতার সীমায় পৌঁছাবে, তখন সে কোরআন পাঠ করবে।"

হাদিসেঃ "কিছু মানুষ কোরআন পাঠ করে এবং কোরআন তাদের বিরুদ্ধে অভিশাপ দেয়।"

বুলে শাহ বলেন, "কিছু মানুষ এমনও আছে যারা আল্লাহর নেয়ামত গ্রহণ করে, তারপর সেটাকে মিথ্যা বলে প্রতিপন্ন করে এবং কোরআনের দোহাই দিয়ে লোকদের ধোকা দেয়।"

এবাদতকারী (আবেদ) মনে করেন, তারা আল্লাহর জন্য এবাদত করছেন এবং রাতভর জাগরণ করছেন, এই কারণে তারা আল্লাহর নিকট আছেন। কিন্তু এবাদতের পরে তাদের প্রার্থনা থাকে স্বাস্থ্য, দীর্ঘজীবন, ধনসম্পদ, হুর এবং প্রাসাদ। ভাবো, তুমি কখনো কি এমন প্রার্থনা করেছ: "হে আল্লাহ, আমার কিছুই প্রয়োজন নেই, কেবল তোমাকে প্রয়োজন?"


আলেমরা মনে করেন, তারা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করেছেন কারণ তাদের মধ্যে কোরআন আছে। তবে প্রশ্ন হলো, কেন তুমি অন্যদের জাহান্নামী বলো? যখন প্রত্যেক মুসলিমের কিছু না কিছু কোরআন জানা এবং কিছু সুরা স্মরণ থাকে। ভাবো, কে জ্ঞান বিক্রি করে? কে নিজেকে বিক্রি করে? অলিদের নিন্দা কে করে? হিংসুক, অহংকারী এবং কৃপণ হয় কে? কথা এক মুখে আর অন্য মুখে, সকালে এক কথা বিকালে আরেক। এটা কার স্বভাব? সত্যকে মিথ্যা এবং মিথ্যাকে সত্য বানিয়ে কে উপস্থাপন করে?যদি তুমি এসব দোষ থেকে মুক্ত থাকো, তবে তুমি খলিফায়ে রাসূল। তোমার দিকে পিঠ দেয়াও বে-আদবী।

অর্থাৎ, যে ব্যক্তি কোরআন পড়ছে, বাস্তবে সে নিজেই কোরআন।

তুমি যদি উক্ত স্বভাবসমূহের মধ্যে ডুবে গিয়ে থাকো তা হলে তুমি সেই যার সম্পর্কে নেকড়ে (ডড়ষভ) বলেছিলে যে, আমি যদি ইউসুফ (আঃ) নবীকে খেয়ে থাকি তা হলে আল্লাহ যেন আমাকে চৌদ্দ শতকের আলেমদের মধ্যে গণ্য করে।