Skip to content

পৃথিবীতে মানুষের উৎস

পেটে পুরুষের বীর্য প্রবেশ করার পর, রক্তকে জমাট বাঁধাতে প্রথমে জড় রূহ (রূহে জামাদী) প্রবেশ করে। এরপর উদ্ভিদ রূহ (রূহে নাবাতী) এসে শিশুর শরীর গঠন ও বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। গর্ভধারণের চার মাস পর প্রাণী রূহ (রূহে হায়ওয়ানী) প্রবেশ করে, যার ফলে শিশুর শরীরে নড়াচড়া শুরু হয়। এই রূহগুলোকে পার্থিব রূহ বা জীবাত্মা বলা হয়। এরপর শিশুর জন্ম হলে, তার দেহে মানবীয় রূহ প্রবেশ করে, যা আসমানী রূহ নামে পরিচিত।

যদি শিশু জন্মের আগেই পেটে মারা যায়, তাহলে তার জানাজা প্রয়োজন হয় না, কারণ তখনো সে পুরোপুরি মানুষ হয়ে ওঠেনি। কিন্তু জন্মের পরপরই মারা গেলে তার জানাজা করা বাধ্যতামূলক, কারণ তখন সে মানব রূহের আগমনের ফলে প্রকৃত মানুষে পরিণত হয়। এছাড়া, তার নফস (প্রবৃত্তি) এবং অন্যান্য আত্মিক শক্তি নাভীর কাছাকাছি অবস্থান নেয়।

যার দেহে জড় রূহের প্রভাব বেশি থাকে, সে পাহাড় ও নির্জন স্থানে বসবাস করতে পছন্দ করে। উদ্ভিদ রূহের প্রভাবে মানুষ গাছপালা ও ফুল ভালোবাসে। প্রাণী রূহের প্রাধান্যের কারণে কেউ কেউ পশুর মতো আচরণ করে এবং তাদের প্রতি বিশেষ আকর্ষণ অনুভব করে। নফসের প্রকৃতি কুকুরের মতো, তাই এটি প্রবল হলে মানুষ কুকুরের স্বভাব ধারণ করে এবং কুকুরের প্রতি ভালোবাসা দেখায়। অন্যদিকে, যদি অন্তরের আধ্যাত্মিক শক্তি (কাল্ব) জাগ্রত হয়, তবে মানুষ ফেরেশতার মতো পবিত্র হয়ে যায়।

মানুষ মারা গেলে আসমানী রূহ আকাশে ফিরে যায়, কারণ এটি শুধু একটি নির্দিষ্ট দেহের জন্য নির্ধারিত ছিল। কিন্তু পার্থিব রূহ ও নফস পৃথিবীতেই থেকে যায়। পার্থিব রূহগুলো এক দেহ থেকে আরেক দেহে স্থানান্তরিত হতে থাকে, কারণ এগুলোর হাশরের দিনের বিচার নেই। তবে, যারা আত্মশুদ্ধি অর্জন করে, তাদের নফস কবরের মধ্যেও ইবাদতে লিপ্ত থাকে এবং জীবিত মানুষদের আধ্যাত্মিকভাবে সাহায্য করে। যেমন, মহানবী (সাঃ) মেরাজের রাতে দেখেছিলেন, নবী মুসা (আঃ) নিজের কবরের মধ্যেই নামাজ আদায় করছিলেন এবং একই সময়ে তিনি আসমানে উপস্থিত ছিলেন।

পাপী মানুষের শক্তিশালী নফস শয়তানের দলে যোগ দিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে এবং মানুষের দেহে প্রবেশ করে তাদের ক্ষতি সাধন করে। এসব রুহকে বদরূহ বা শয়তানী রুহ বলা হয়। বাইবেলে উল্লেখ আছে যে, ঈসা (আঃ) বদরূহ বের করতেন।

পার্থিব রূহ ও নফস পৃথিবীতেই থেকে যায়, কিন্তু মানব রূহ হাশরের দিন ঈলিয়িন (উচ্চতর জগত) বা সিজ্জিন (নিচু জগত)-এ পৌঁছে যায়। মানুষের লতিফা (আত্মিক শক্তি) যদি আলোকিত থাকে, তবে সেগুলো ঈলিয়িনে অবস্থান করে, নইলে কবরেই বিলীন হয়ে যায়। মানুষ নফসের কারণে অপবিত্র হয়।

বুলেহ শাহ বলেছেন, "এই অপবিত্র নফসই আমাদের অপবিত্র করেছে, মূলত আমরা অপবিত্র ছিলাম না।"

নফসকে শুদ্ধ করার জন্যই আসমান থেকে ধর্মগ্রন্থ অবতীর্ণ হয়েছে এবং নবী-অলিদের আগমন হয়েছে। কোথাও নফসকে দোযখের ভয় দেখানো হয়েছে, আবার কোথাও বেহেশতের লোভ দেখানো হয়েছে। কঠোর সাধনা, ইবাদত ও রোজার মাধ্যমে নফসকে সংশোধন করার চেষ্টা করা হয়েছে। ফলে, কেউ কেউ বেহেশতের যোগ্যতা অর্জন করেছে, আর কেউ কেউ গোপন আধ্যাত্মিক জ্ঞান লাভ করে আল্লাহর বন্ধু বা ওলি হয়ে গেছে।